সর্বশেষ সংবাদ
Own Post
প্রকাশিত: 11:22:12 pm, 2021-06-22 | দেখা হয়েছে: 13 বার।
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :
সোনালী স্বপ্নের হাতছানি দিয়েই শুরু করেছিলেন পদযাত্রা। অবিরাম হেঁটেছেন উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথে। স্বপ্রতিভায় স্বমহিমায় বিকশিত হয়েছেন। দীর্ঘ যাত্রাপথে মিথ্যাকে রঙ মেখে নানাভাবে গোয়েবলসীয় কায়দায় এনে তাকে বিতর্কিত এবং জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা হয়েছে গোপনে-প্রকাশ্যে।
সব চড়াই উৎরাই তিনি পার করেছেন! দু’হাতে ঠেকিয়েছেন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। সর্বাঙ্গ রুধির মেখে সব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্রত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, নীতি এবং নৈতিকতার মানদন্ডে জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ যুগোত্তীর্ণ করেছেন নিজেকে। পরিশীলিত মেধা ও কূশলী-বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে নিজের তিন বছর সময়কেই আলোকোজ্জ্বল করেছেন বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ।
কালস্রোতের উর্মিমালায় সৃষ্টিসুখের উল্লাসে সাফল্যে রাঙিয়েছেন সেনাপ্রধানের কঠিন চ্যালেঞ্জিং অধ্যায়টিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ আনুগত্যের নজির স্থাপন করেছেন একদিন-প্রতিদিন। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় গৌরবময় সহযাত্রী করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা বাঙালি জাতির শ্বাশ্বত গর্ব ও আস্থার প্রতীক নিজ বাহিনীকে। অকৃত্রিম আবেগে ভালোবাসায় মুড়িয়েছেন বীর সেনাদের।
৩৯ বছরের গৌরবময় সেই অধ্যায় এখন গোধূলী লগ্নে। আবেগ উথলে দেওয়া স্নায়ুকোষগুলো রেণু উড়িয়েছে দেশের সব ক্যান্টনমেন্টে। আর মাত্র একদিন বাদেই থেমে যাচ্ছে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল এক পথচলা। দাঁড়ি টানতে হচ্ছে নান্দনিক এক স্বপ্নযাত্রার।
ঠিক যেমন আলো বিলিয়ে দেওয়া সূর্যকেও এক সময় অস্ত যেতে হয় তেমনি কিংবদন্তিদেরও একসময় থামতে হয়, বলতে হয় ‘শুভ বিদায়’। এভাবেই বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) থামছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তবে সেনাপ্রধান হিসেবে বিউগলের করুণ সুরে নয় কৃষ্ণচুড়ার রঙিন আভাতেই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ সূর্যাস্ত।
বলা হচ্ছে, এই ধরাধামে বিদায় বেলায় ক’জনেরই বা ভাগ্যে জুটে এমন নায়কোচিত সম্মান? কিন্তু বীরের সম্মাননার মতোই মহাকালের ইতিহাসে একজন প্রধান সেনাপতি হিসেবে তিনি নিজের বিদায় লিখে গেছেন স্বর্ণের অক্ষরেই। স্বভাবতই বিদায় বেলায় তাঁর চোখের কোণে দু’এক ফোটা মণিমুক্তো।
যদিও কেউ বলছেন না ‘জেনারেল আজিজের বিদায়’। শুধুই বলছেন ‘জেনারেল জেনারেল’, ‘লিজেন্ড-লিজেন্ড’, ‘গুডবাই’। চারিদিক থেকেই ভেসে আসছে গৌরবের এমন সব গর্জন। একটি সাচ্চা বাঘের জন্যই এই গর্জন। বিদায়বেলায় এটিই যেন জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের অনেক বড় এক অর্জন।
সাড়ে তিন যুগের এক মহাকাব্যের মধুর সমাপ্তি। এই মহাকাব্যের জন্যই হয়তো স্বপ্ন বুনেছিলেন একেকটি সূর্যোদয়, একেকটি গোধূলীতে মায়ের সঙ্গে কাটানো নিজের প্রতিটি মুহুর্তে। নিজের পরিবারের সদস্যদের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তিতে আর নিজের সমস্ত হার-জিত, উত্থান-পতনের সঙ্গে নি:শব্দে নীরবে জড়িয়ে যাওয়া জীবনসঙ্গী দিলশাদ নাহার আজিজের সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সেনা সদরের চেনা সবুজ ঘাসকে শেষবারের মতো একবার ছুঁয়ে যাওয়া। জুনের কড়া রোদ্দুর আর ঘনিয়ে আসা বিষণ্নতায় জ্বলজ্বলে এক নক্ষত্রের ঐতিহাসিক বিদায়ক্ষণ। এরই মধ্যে দিয়েই সম্পন্ন হবে একটি রূপকথা। সেনা সদরের পুণ্যভূমিতে রূপকথার রাজপুত্রকে পূর্ণতা দেওয়ার।
ঠিক যেন শেষের কবিতার শেষ পাতা। যদিও এই দিনগুলোই বহু বছর পর ‘অশীতিপর’ একজন জেনারেল আজিজকে ভেজাবে সুখের বৃষ্টিতে। তিনি অবসরে গেলেও তার নেতৃত্ব বেঁচে থাকবে যুগের পর যুগ সব সহকর্মী, সতীর্থ আর মানুষের ভালোবাসায়।
স্বাধীনতার পর সহিংসতা ছাড়াই প্রথম জাতীয় নির্বাচনের রেকর্ড
সব দলের অংশগ্রহণে রক্তপাতহীন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের কৃতিত্ব মুঠোতে ভরেছেন বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ। ২০১৮ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেই কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বড় এক চ্যালেঞ্জেও উত্তীর্ণ হন।
ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের আগে অনেক শঙ্কা-অঘটন আর উৎকন্ঠার চাদরকে তুড়িতে উড়িয়ে ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সেনাপ্রধান। দেশের স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিলো অবিচল। সেনাবাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় মানুষ আশ্বস্ত হয়ে ভোট দিয়েছে। ভোটে গণতান্ত্রিক রায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় অর্জিত হয়।
পোড় খাওয়া ভোটাররা ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের ভোটাররাও উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার আওয়ামী লীগকেই টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের জন্য নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লব ঘটান।
সেনাপ্রধানের বিভিন্ন দেশ সফর, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন মাত্রা
সেনা সদর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত পৌনে তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, সৌদি আরব, মায়ানমারসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। প্রতিটি দেশের সরকারের আমন্ত্রণেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার লক্ষে তিনি এসব দেশ সফর করেছেন।
তাঁর প্রতিটি সফরই দেশের জন্য কিছু না কিছু অর্জন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। যার বেশিরভাগই সুফল পেয়েছে দেশ। কোন কোনটিতে হয়েছে প্রাপ্তির সূত্রপাত। দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই তিনি সফরগুলোর অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এসব দেশের বিরাজমান সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করতেও নিজের বহুমাত্রিক মেধা, বিচক্ষণতা ও পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন জেনারেল আজিজ।
মাস কয়েক আগে সেনাপ্রধানের টানা ১৩ দিনের ঐতিহাসিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকে নসাৎ করতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল স্বাধীনতা বিরোধী একটি পক্ষ। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এই সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মধ্যকার বিরাজমান সহযোগিতামূলক সম্পর্কের এক নতুন দিক উন্মোচন করেছেন জেনারেল ড.আজিজ। একই সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে নবযাত্রারও সূচনা করেছেন।
জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও পৃথক পৃথক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের মাধ্যমে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছেন। জাতিসংঘের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়নসহ মানবাধিকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নীতিনির্ধারণী/ফোর্স কমান্ড পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে সেনাবাহিনী প্রধানের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে নিজের তিন বছরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সেনাপ্রধান। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা হচ্ছে। এরই মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য সামরিক নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।
আর এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্বের ফ্রন্টলাইনে বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন সেনাপ্রধান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে চীন-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফরের সময় সেসব দেশের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা যে বাংলাদেশের সৃষ্ট নয়, বরং মায়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া তা বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বারবার গুরুত্বের সঙ্গেই উপস্থাপন করেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
সফলভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা
দুর্যোগের ক্যালেন্ডারের পাতায় দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করা দু’টি ঝড়- বুলবুল, ফণী ও সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন আম্পান মোকাবেলা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা বেড়েছে।
তবে ২০১৯ থেকে ২০২০ প্রকৃতি যেন নূন্যতম ছাড় দেয়নি। এর আগেও বিভিন্ন সময় বন্যা, সাইক্লোন ও ঘুর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী সফলভাবেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।
সুপার সাইক্লোন আম্পানের পর ঈদের দিনেও ঈদ আনন্দ উপেক্ষা করে খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের ঘরদোর মেরামতের কাজ করে দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজও করে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
এসব কাজ সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন এলাকা সফর করেছেন সেনাপ্রধান। তিনি নিজ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা-বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও জরুরি সভা করেছেন। নিজ বাহিনীর তৃণমূলের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তাঁর উজ্জীবনী ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আবারও শীর্ষে
বিশ্ব শান্তি রক্ষায় প্রায় ৩৩ বছর যাবত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে সেনাবাহিনী। সৎ, নির্ভীক ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যরা মালি, দক্ষিণ সুদান কঙ্গো, লাইবেরিয়া থেকে শুরু করে ৪০ টি দেশে ৫৪ টি মিশনে শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিজেদের সেরা হিসেবেই প্রমাণ করেছেন।
এসব মিশনে ১ লাখ ৩৭ হাজার সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। শান্তির পথে আসা এসব দেশে মানবাধিকার রক্ষা, বেসামরিক নাগরিক বিশেষত শিশু ও নারীদের সুরক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে গেছে বাংলাদেশিরা।
একই সঙ্গে সড়ক ও স্থাপনা নির্মাণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা দেশসমূহ সফর করেন। সেখানে তিনি সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার বিষয়টিতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ইতিবাচক ফলও মিলে।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক সদস্যের অংশগ্রহণের দিক থেকে অতীতে প্রথমেই ছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ইথিওপিয়া এই স্থান দখল করে। জাতিসংঘের র্যাঙ্কিং’এ আবারও শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এটি জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের সেনাপ্রধানের জামানায় অনন্য এক প্রাপ্তি।
প্রথমবার জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের অফিস অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স, ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের (ডিপিও) চিফ অব স্টাফ পদটিতে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দিবেন একজন বাংলাদেশী সেনা কর্মকর্তা। তাঁর নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফরের চার মাসের মাথাতেই মিলে এমনই এক সুসংবাদ। ঐতিহাসিক এই সফর এরই মধ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য তিনি খুলে দিয়েছেন অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দূয়ার। অর্জনের অসংখ্য পালকে ইতিহাস গড়েই নিজেদের গৌরবদীপ্ত করছেন দেশপ্রেমিক সেনারা।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক ও কার্যকর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের দূরদর্শীতায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
সেনাপ্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই মুজিব শতবর্ষে প্রথমবারের মতোন বিরল এ সম্মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মর্যাদাকর এই সম্মানে উচ্ছ্বসিত দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ কালের আলোকে জানান, মার্কিন সেনাপ্রধানের আমন্ত্রণে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ দিনের সরকারি সফরে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
সেই সফরে জাতিসংঘ সদর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে তিনি জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কন্টিনজেন্ট প্রেরণ এবং জাতিসংঘ সদর দফতরের বিভিন্ন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আরও অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন।
জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্ব এই ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর একজন অফিসারকে নিয়োাগ দেওয়া হয়েছে।
আরও অর্জন বাস্তবতার মেলবন্ধন
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে (মিনুসমা) সেক্টর কমান্ডার পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির একজন কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর নিয়োগ পান। এছাড়াও জাতিসংঘ সদর দফতরে মিলিটারি অ্যাডভাইজার এবং চিফ অব স্টাফ পদে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘে মিলিটারি অবজারভার এবং স্টাফ অফিসার হিসেবে ২০টি অতিরিক্ত নিয়োগ বরাদ্দ মিলেছে।
এদিকে, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সফরকালে তিনি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে (সিএআর) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জনবল আরও বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব রাখেন এবং তাদের মোতায়েনের কাজ চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স কোম্পানি (ব্যানএসএফসি) এবং লাইট কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্সের (এলকিউআরএফ) ৫০ জন জনবল বৃদ্ধিসহ ব্যানব্যাট-এর লেভেল-১ হাসপাতালকে লেভেল-২ হাসপাতালে উন্নীত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
একই মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কুইক রিআ্যকশন ফোর্স (কিউআরএফ) এবং ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি মোতায়েনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সমন্বিত স্পেশাল ফোর্স সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েনের ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পেয়েছে।
সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে একটি শক্তিশালী কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং একটি এভিয়েশন ইউনিট মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা শিগগিরই মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যেই ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআর) অব কঙ্গোতে ৬ সদস্যের অ্যারোমেডিক ইভাকুয়েশন টিম (এএমইটি) এবং ১৩ জন অতিরিক্ত মিলিটারি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেনাবাহিনী প্রধান দীর্ঘমেয়াদি বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধের ব্যাপারেও জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের চারটি কন্টিনজেন্ট রিস্ক প্রিমিয়াম পাচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধানের ঐকান্তিক উদ্যোগের কারণেই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েনের পূর্বেই সকল শান্তিরক্ষীদের করোনার টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শক্ত হাতে সামাল দিয়েছেন করোনা দুর্যোগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রগাঢ় আন্তরিকতায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বে পৌনে তিন বছরে সেনাবাহিনী অনেক এগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কোভিড-১৯ মহাদুর্যোগ শক্ত হাতে সামাল দিয়েছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশে দেশের প্রতিটি জেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দোরে দোরে গিয়ে সতর্ক প্রচারণা চালিয়েছেন সেনারা।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চরম সঙ্কটের সময়ে সাধারণ মানুষকে পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা, গরিব-অভাবী ও দুস্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার সহায়তাসহ সেনাবাহিনীর মানবিক নানা উদাহরণের গল্প এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে বীরচিত্তেই একের পর এক কার্যকর উদ্যোগ সফলতার সঙ্গেই বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যিনি নিজের বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই বাঙালি জাতির কষ্ট, দুর্দশা লাঘবে কখনও পিছপা হতে শিখেননি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিজেদের জীবনবাজি রেখেই সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছে সেনাবাহিনী। অতীতের মতোই নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার সঙ্গে চলমান মহাদুর্যোগেও সফলভাবেই সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাপ্রধান।
সেনা সদর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার প্রথম ওয়েভ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ২৯ হাজার ৬১ জন কৃষককে মৌসুমি ফসল বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। পোশাক দিয়েছে ২৯ হাজার ২৮৯টি দুস্থ পরিবারকে। এছাড়া সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ৭৪ হাজার ২৩৫টি টহল পরিচালনা করেছেন সেনা সদস্যরা।’
নিজের বিভিন্ন বক্তব্যে সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জীনবাজি রাখারও প্রশংসা করেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘করোনার কারণে যখন সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে সমস্যা হচ্ছিল, তখন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালনা করে ৫০ হাজার ৮৩১ জনকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।
পাশাপাশি ১৪ হাজার ৬৪৭ জন গর্ভবতী মায়েদের দেয়া হয়েছে বিশেষ চিকিৎসাসেবা। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনায় সেনাবাহিনী নির্ভরতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।’
করোনাকালে সেবার মানদণ্ডে সেনাবাহিনীর চিকিৎসা ব্যবস্থা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উচ্ছ্বাসভরা কন্ঠেই জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও সেবার মানসিকতাই এই অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা প্রতিহতে প্রতিজ্ঞা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বে সমৃদ্ধির মহাসড়কে উঠেছে বাংলাদেশ। সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বোতভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান তাঁর প্রায় পৌনে তিন বছরের প্রতিটি বক্তব্যেই উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত করার যে কোন অপচেষ্টা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর প্রতিজ্ঞার কথা তুলে ধরেছেন।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ দেশের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও অমিত দৃঢ়তায় উচ্চারণ করেছেন। জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ বাস্তবতা, এমনটিও উল্লেখ করেছেন সব সময়।
জাতি ও দেশ গঠনে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর এই স্বীকৃতিকে সেনাবাহিনীর জন্য একটি বিরল সম্মাননা বলেই মনে করেন সেনাপ্রধান।
চলতি বছরের বুধবার (০৩ মার্চ) দুপুরে সাভার সেনানিবাসের ফায়ারিং রেঞ্জে সেনাবাহিনী ফায়ারিং প্রতিযোগিতার সমাপনী ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জেনারেল আহমেদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই নিরলস আস্থা দেশ গঠনে এবং যে কোনো দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের জনগণের জন্য কাজ করতে সেনা সদস্যদের আরও অনুপ্রাণিত করবে।’
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বগুণেরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ড. আজিজ আহমেদ। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য দেশপ্রেম, যোগ্যতা এবং অবিচল নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতির যোগ্য হয়ে উঠেছে।’
বাঙালি জাতির ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার জন্মজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে বাংলাদেশের এমন অর্জনকে আনন্দ ও গৌরবের উল্লেখ করে সেদিন তিনি আরও বলেন, ‘এই অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থা রেখে সরকারের দেওয়া যেকোন দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালনে সর্বদা স্বচেষ্ট থাকতেও নিজ বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর উন্নয়ন-আধুনিকায়নে বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে রূপান্তরের লক্ষে কার্যকর সব পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক এই বাহিনীকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে প্রশ্নাতীত আন্তরিকতায় প্রমাণও দিয়েছেন বঙ্গকন্যা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই বলে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. আজিজ আহমেদও।
জানা যায়, এক সময় যা ছিল কল্পনা এখন সেটি হাতের মুঠোয়। সেনাবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা অর্জনে ট্যাংক, এপিসি, সেল্ফ প্রোপেল্ড বা আর্টিলারি গান যুক্ত হয়েছে আরও আগেই। গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে সমকালীন বিশ্বে সেনাবাহিনীসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম পর্যায়ে পৌঁছেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ইতোমধ্যেই গত রোববার (২০ জুন) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫১ এমএলআরএস রেজিমেন্টে যুক্ত হয়েছে আধুনিক টাইগার মাল্টিপল লঞ্চ/রকেট মিসাইল সিস্টেম, যা টাইগার এমএলআরএস নামে পরিচিত। এই সিস্টেম স্বল্প সময়ে অন্যান্য আর্টিলারি সিস্টেমের তুলনায় অধিক দূরবর্তী একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একই সময়ে নিখুঁত ও কার্যকরভাবে আঘাত হানতে পারবে। যা সেনাবাহিনীর বিদ্যমান অভিযান সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
কারও মতে সর্বকালের অন্যতম সেরা জেনারেল আজিজ
কারও মতে এলিয়েন, কারও মতে সর্বকালের অন্যতম সেরা বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। যার পান্ডুলিপিতে রাজকীয় চরিত্র সাফল্যের কথা কয়। তিনি একজন সেনাপ্রধানই নন, সেরাদের মধ্যে অন্যতম। অগণিত সুখের প্রদীপ জ্বেলে তিনি আছেন ভাবনার করিডোরে। স্মৃতির পাতায় পাতায়, দৃষ্টির সীমানায়, হৃদয়ের আঙিনায়। অন্তহীন চাওয়ায় ছুটে চলা, ভেঙে সব বাঁধা, মহাকাব্য করে যান রচনা।
হাজার ফুলে ছেঁয়েছে যে পথ সে পথ যেন গিয়ে থামে তাঁর ঠিকানায়। যার মস্তিষ্কের কারুকার্যে ফুল ফুটেছে বাড়িতে বাড়িতে। অনাবিল সব সুখের ছোঁয়ায় তিনি উপহার দিয়েছেন এমনই সব স্বপ্নের দিন। সময় যেন থেমে রয় তাঁর জাদুর ছোঁয়ার আশায়। সেনাবাহিনী আর তিনি একসঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে ছবির মতো জেগে রয়।
সম্ভবত এ কারণেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই মধুর গান দখল করেছে জেনারেল আজিজের হৃদয়-মস্তিষ্ক ‘’মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে’।
বিদায়ের বিষাদ আছে সবারই মনে। বিষাদ ভুলে হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছে সবাই তাকে। ‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পঙক্তিটি বারবার মনে করে আনমনে কেঁদে যাচ্ছে সবার হৃদয়।
আবার, কবিগুরুর শেষের কবিতার লাইনগুলোই কীনা গুঞ্জণ-গুঞ্জরিত হচ্ছে জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের কন্ঠে- হে ঐশ্বর্যবান/ তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান/ গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়/ হে বন্ধু বিদায়।
আকাশে-বাতাসে অনাদিকালের সেই আকুল আকাঙ্খাও যেন ভেসে উঠছে। ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না’। হৃদয়ের দশদিগন্তে এখন রঙিন আলোর নাচন। সে আলোয় দুলে উঠছে আত্মার গহিনে লুকানো ভালোবাসার কথা।
বিদায় মানে কি শুধু বিরহ? বিদায়ের অন্য অর্থ কি তবে বিচ্ছেদ? এজন্যই কী কবি বলে গেছেন-চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়/ চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী/ চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে।
কারও কারও মতে, বিদায় মানে কি প্রিয় মানুষটিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা? বিদায়ের ক্ষণটি সে জন্যই কি ব্যথাভরা? সে জন্যই কি বিদায়বেলায় কারো ‘সজল করুণ নয়ন’ নত হয়ে থাকে বেদনায়? কিন্তু সবাই যে চান হাসিমুখে বিদায় নিতে।
কারো চোখের পানিতে বিদায়ের পথটি ভিজে কর্দমাক্ত হয়ে উঠুক, তা যে আমরাও চাই না। সে জন্যই কি আকুতি আমাদের হৃদয়-মনে- ‘মোছ আঁখি, দুয়ার খোল, দাও বিদায়।’ সে জন্যই কি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে বলি- ‘শুভ বিদায়’। হ্যাঁ, জেনারেল ড.আজিজ আহমেদ, ‘শুভ বিদায়’ আপনাকে। কবিগুরুর ভাষায়- ‘তুমি রবে নীরবে..’।
লেখকঃ এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান-
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।